যেমন হলো ফুটবলের ফেরা


দক্ষিণ কোরিয়ার ‘কে লিগ’ ফিরেছে গত সপ্তাহে। তুলনামূলক কম পরিচিত কিছু লিগ, যেমন বেলারুশ ও নিকারাগুয়ায় কখনও বন্ধই হয়নি। কিন্তু দুই মাসের মধ্যে এই প্রথম কোনো শীর্ষ সারির লিগ মাঠে ফিরল। লম্বা এই বিরতির কারণ সবার জানা, বিশ্বব্যাপী আঘাত হানা কোভিড-১৯ মহামারী।
জার্মানির স্থানীয় সময় শনিবার দুপুরে একই সঙ্গে পাঁচটি ম্যাচ মাঠে গড়ানো দিয়ে ফিরল দেশটির শীর্ষ ফুটবল প্রতিযোগিতা। কেমন ছিল চিত্র? দর্শকশূন্য গ্যালারি, নেই সেই চেনা ঝাঁঝ। সবুজ আঙিনায় পাশাপাশি চলল লড়াই আর সামাজিক দুরত্ব নীতির প্রয়োগ। এমনকি সাইড বেঞ্চেও খেলোয়াড়রা ছিলেন পরস্পরের থেকে দূরে।
তাপমাত্রা মাপা, অনেক বাস ও জীবাণুমক্ত বল
অনেকগুলো বাসে করে স্টেডিয়ামে এসেছেন খেলোয়াড়রা, যেন যাত্রাপথে একে অপরের থেকে দুরত্ব রেখে বসতে পারেন সবাই। সপ্তাহজুড়ে খেলোয়াড়দের হোটেলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল এবং নিয়মিত তাদের তাপামাত্রা মাপা হতো।
বাস থেকে নেমে মাঠে প্রবেশের সময় সবার মাস্ক পরা ছিল। সাংবাদিক, টিভি ক্রুসহ বাকি যারা স্টেডিয়ামে ছিলেন, তাদেরও তাপমাত্রা মাপা হয়।
দর্শক তো আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল। তারপরও স্টেডিয়ামের বাইরে যেন দর্শক ভিড় করতে না পারে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল পুলিশের। স্টেডিয়ামে সব মিলিয়ে ছিলেন মাত্র ২১৩ জন; মাঠ ও মাঠের চারপাশে ৯৮ জন (খেলোয়াড়, কোচ ও বল বয়) আর স্ট্যান্ডে ১১৫ জন (যেমন নিরাপত্তাকর্মী, চিকিৎসক ও গনমাধ্যমকর্মী)।
আরও কিছু নিরাপত্তা কর্মী ও ভিএআর অপারেটরদের মিলে ১০৯ জন ছিলেন স্টেডিয়ামের ঠিক বাইরে।
ম্যাচের জন্য মোট ৩০টি বল রাখা ছিল। ম্যাচ শুরুর আগে ও বিরতির সময় প্রতিটি বল জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়।
সাইড বেঞ্চে সামাজিক দুরত্বে বদলি খেলোয়াড়রা
বদলি খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই ছিলেন মাস্ক পরে। সাইড বেঞ্চে বসেন তারা সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে। বেঞ্চে জায়গা না হওয়ায় কিছু খেলোয়াড়কে গ্যালারির সামনের সারিতে বসতে দেখা যায়।
সাইডলাইনে প্রধান কোচের মাস্ক ছাড়া দাঁড়ানোর অনুমতি ছিল, যেন তিনি খেলোয়াড়দের নির্দেশ দিতে পারেন। ওয়ার্ম আপ করার সময় বদলি খেলোয়াড়দের মাস্ক খুলে ফেলতে দেখা যায়। আর যখন একজন খেলোয়াড়কে তুলে নেওয়া হচ্ছিল, তখন বেঞ্চের দিকে যাওয়ার আগেই তাকে মাস্ক ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।
উদযাপনে সতর্কতা, কনুইয়ে কনুই
সবকিছু নিয়মের ঘেরাটোপে বাঁধা থাকলেও মাঠের ফুটবল ছিল চেনা রূপে; ছিল ট্যাকল, বল কাড়াকাড়ি। গোলও হয়েছে বেশ, ছয় ম্যাচে মোট ১৬টি গোল দেখা গেছে।

গোল উদযাপনে অবশ্য খেলোয়াড়দের সতর্ক থাকতে দেখা গেছে। পরস্পরকে জড়িয়ে না ধরে বা ‘হাই ফাইভ’ না করে অনেককে দেখা গেছে কনুইয়ে কনুই ঠেকাতে।
ব্যতিক্রমও অবশ্য ছিল। হফেনহাইমের বিপক্ষে হের্টা বার্লিনের ৩-০ গোলে জয়ের ম্যাচে যেমন। গোলের পর কোনো সতর্কতার ধার ধারেননি তারা, চিরচেনা রূপেই উদযাপনে মেতে ওঠেন। এজন্য অবশ্য তাদের কোনো শাস্তি পেতে হবে না। খেলোয়াড়দের একে অপরকে জড়িয়ে না ধরতে লিগ কর্তৃপক্ষ কোনো আইন জারি করেনি।
দুই দলের বেঞ্চের খেলোয়াড়দের শুধু মাঝেমধ্যে সতীর্থদের উৎসাহ দিতে দেখা গেছে। ফলে টিভি দর্শকরা কোচ-খেলোয়াড়ের কথা শুনতে পাচ্ছিলেন বেশ ভালোভাবে। বলে কিক নেওয়ার শব্দ ছিল স্পষ্ট, এমনকি জালে বল ছোঁয়ার শব্দও!
পাঁচ বদলি খেলোয়াড় নামানোর ফিফার নতুন নিয়ম আগেই কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছিল বুন্ডেসলিগা। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ৪-০ গোলে হারের ম্যাচে সুযোগটি কাজে লাগায় শালকে। বিরতির আগে দুটি এবং দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি পরিবর্তন করে তারা।

Post a Comment

0 Comments