একাই চার গোল দিয়ে বার্সেলোনাকে শীর্ষে তুললেন মেসি


আগের চার ম্যাচে গোল নেই। এমন নয় যে ভালো খেলতে পারছিলেন না বার্সেলোনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করছিলেন। ছয়টি গোল করিয়েছিলেন সতীর্থদের দিয়ে। কিন্তু নিজেই যে গোল পাচ্ছিলেন না! সে আক্ষেপ যেন এইবারকে পেয়ে ষোলোআনা পুষিয়ে নিলেন রেকর্ড ছয়বারের বারের ব্যালন ডি'অর জয়ী তারকা। হ্যাটট্রিক তো পেলেনই, শেষ পর্যন্ত করলেন চার গোল। ফলে লা লিগায় আবারো শীর্ষে উঠে এলো বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
ম্যাচের প্রথমার্ধেই হ্যাটট্রিক পূরণ করেন মেসি। দ্বিতীয়ার্ধে দেন আরও একটি। ফলে ন্যু ক্যাম্পে শনিবার এইবারের বিপক্ষে ৫-০ গোলের বড় ব্যবধানে জিতেছে বার্সেলোনা। শীর্ষে থাকা রিয়াল মাদ্রিদকে টপকেছে বটে, তবে ফের শীর্ষে ওঠার সুযোগ এদিনই পাচ্ছে রিয়াল। রাতেই লেভান্তের মাঠে জয় ফেলে ফের শীর্ষে উঠবে জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা। এ জয়ে ২৫ ম্যাচে ৫৫ পয়েন্ট বার্সেলোনার। এক ম্যাচ কম খেলা রিয়ালের সংগ্রহ ৫৩ পয়েন্ট।
শুরু থেকে প্রাধান্য বিস্তার করে খেলা এ ম্যাচ গোল বাতিল হয়েছে ৪টি। যার ৩টি গিয়ে বার্সেলোনার বিপক্ষে। অন্যথায় জয় আরও বিশাল হতে পারতো। তবে প্রথম দফায় দুর্ভাগা ছিল এইবারই। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই গোল পায় তারা। তবে ভিএআরে বাতিল হয় সে গোল। অফসাইডে ছিলেন সের্জি এনরিচ।
১৪তম মিনিটে শুরু হয় মেসির জাদু। ইভান রাকিতিচের বাড়ানো বলে এক ডিফেন্ডারকে নাগমেট করে আরও ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাঁ প্রান্ত থেকে নেওয়া নিখুঁত এক শট বল জালে জড়ান বার্সেলোনা অধিনায়ক। তিন মিনিট পর মিনিটে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন গ্রিজমান। কিন্তু দারুণ সেভ করেন এইবার গোলরক্ষক মার্কো দিমিত্রভিচ। পরের মিনিটে ভিদালের নেওয়া কোণাকোণি শটও ফিরিয়ে দেন তিনি।
৩৭তম মিনিটে আবারো মেসি জাদু। আর্তুরু ভিদালের পাস থেকে তিন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে দারুণ এক কোণাকোণি শটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন এ আর্জেন্টাইন।
তিন মিনিট পর নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন মেসি। অবশ্য এ গোলে বড় দায় রয়েছে এইবার ডিফেন্ডারদের। ডান প্রান্তে আলভারো তেজেরু ঠিকভাবে বল পরিষ্কার করতে না পারলে ইভান রাকিতিচের পায়ে লেগে অনেকটা ফাঁকায় বল পেয়ে যান মেসি। এগিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে শট নিলে গোল পেতেও পারতেন মেসি। তবে আরও নিশ্চিত হতে ফাঁকায় দাঁড়ানো আতোঁয়ান গ্রিজম্যানকে কাটব্যাক করেন তিনি। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে মিস করেন গ্রিজমান। বলের নিয়ন্ত্রণই নিতে পারেননি। পেছন থেকে এক ডিফেন্ডার এসে ঠিকভাবে বল পরিষ্কার করতে না পারায় ফের ফাঁকায় বল যান মেসি। এবার নিজেই শট নিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন বার্সা অধিনায়ক।
বিরতির আগে প্রায় নিশ্চিত একটি গোল মিস করে বার্সেলোনা। এইবার গোলরক্ষক অবিশ্বাস্য দুটি সেভ করেন। প্রথম দফায় গোলবঞ্চিত করেন গ্রিজমানকে। দ্বিতীয় দফায় সের্জিও বুসকেতসকে। গোলরক্ষককে একা পেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত শট নিতে না পারায় গ্রিজমানের শট ফেরান দিমিত্রভিচ। আর গোলমুখে একেবারে ফাঁকায় থাকায় বুসকেতসের শটও ফেরান তিনি।
৫১তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর আরও একটি দারুণ সুযোগ নষ্ট করে বার্সেলোনা। মেসির বাড়ানো বল ধরে বাঁ প্রান্তে দারুণ এক ক্রস করেছিলেন গ্রিজমান। ঝাঁপিয়ে পড়ে ভালো শট নিয়েছিলেন রাকিতিচ। তবে অল্পের জন্য লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। ১০ মিনিট পর দারুণ এক সেভ করেন বার্সেলোনা গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রেস টের স্টেগেন। বিপজ্জনক জায়গা থেকে ফ্রিকিক পেয়েছিল এইবার। দারুণ শট নিয়েছিলেন তাকাসি ইনুই। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ে সফরকারীদের হতাশ করেন স্টেগেন।
৬২তম মিনিটে নেলসন সেমেদোর ভুলে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়ে যান তাকাসি। ডি-বক্সে ঢুকে ভালো শট নিয়েছিলেন এ জাপানি তারকা। বদলী খেলোয়াড় ফ্রাঙ্কি ডি ইয়ংয়ে গায়ে লেগে দিক বদলে অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে সে যাত্রা বেঁচে যায় বার্সা। ৬৭তম মিনিটে অবিশ্বাস্য এক মিস করেন এইবারের পাবলো ডি ব্লেসিস। একেবারে ফাঁকায় বল পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। বল পেয়ে বেশ কিছুক্ষণ দেখে শুনে কোণাকোণি শট নিয়েছিলেন তিনি। তবে অসাধারণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে সে শট লুফে নেন স্টেগেন।
৭৯তম মিনিটে মেসির ফ্রিকিক ফিস্ট করে ফিরিয়ে দেন এইবার গোলরক্ষক দিমিত্রভিভ। আট মিনিট পর নিজেদের চতুর্থ গোল করেন মেসি। এ গোলে দারুণ অবদান রয়েছে বিশেষ বিবেচনায় নতুন সাইনিং করা মার্টিন ব্র্যাথওয়েটের। তার নেওয়া শট গোলরক্ষকের হাতে লেগে ফাঁকায় বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেন মেসি। নির্ধারিত সময়ে মিনিট খানেক আগে ব্যবধান আরও বাড়ায় বার্সেলোনা। এবারও ব্র্যাথওয়েটের শট গোলরক্ষক ফেরালে ফাঁকায় বল পেয়ে জালে জড়ান আর্থুর মেলো।

Post a Comment

0 Comments