এর চেয়ে আর বেশি কী চাইতে পারত বাংলাদেশ


কোনো কিছু অর্ডার করতে গেলে ঠিক যেমনটা আপনি নিজের পছন্দে চাইতে পারেন, ঠিক তেমনই এক দিন যেন পেল বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি তুললেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি এলো মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে। লিটন দাসও পেলেন ফিফটি। প্রায় সারা দিন ব্যাট করে মাত্র ৩ উইকেট পড়ল বাংলাদেশের, এলো আরও ৩২০ রান। সবমিলিয়ে সাড়ে পাঁচশ ছাড়িয়ে এলো ইনিংস ঘোষণা। শেষ বিকালে জিম্বাবুয়ের ২ উইকেট তড়িঘড়ি ফেলে জেতার কাজটাও এগিয়ে রাখলেন নাঈম হাসান।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বোলারদের ওপর দিনভর ছড়ি ঘুরিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। একের পর এক বড় জুটি, সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি আর ফিফটির দেখেছেন মাঠে আসা দর্শকরা। ৬ উইকেটে ৫৬০ রান করে  দিনের একদম শেষভাগে ইনিংস ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ, সফরকারীদের থেকে বাংলাদেশ তখন এগিয়ে ২৯৫ রানে। ইনিংস হার এড়াতে নামা জিম্বাবুয়ে দিনশেষে ২ উইকেটে করেছে ৯ রান।
এই টেস্টের চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় ইনিংস ঘোষণা আসতে পারত যেকোনো সময়েই। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরির পর আর বেশি অপেক্ষা করেনি বাংলাদেশ। ১৯৯ থেকে চার মেরে তিনি ডাবল সেঞ্চুরিতে যেতেই নড়েচড়ে ওঠেন অধিনায়ক মুমিনুল, খানিক পরই ডেকে পাঠান ব্যাটসম্যানদের।
সকালে ৩ উইকেটে ২৪০ রান নিয়ে নেমে প্রথম সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়েই আরও ১২১ রান যোগ করে বাংলাদেশ। আগের দিন ৭৯ রান নিয়ে অপরাজিত থাকা মুমিনুল হক তুলে নেন ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। চতুর্থ উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে ২২২ রানের ম্যারাথন জুটির পর আউট হন তিনি। রান খরায় ভুগতে থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক ১৪ ইনিংস পর পান সেঞ্চুরির দেখা।
সাদা পোশাকে গত ১০ ইনিংস থেকে সেঞ্চুরি হচ্ছিল না মুশফিকেরও। যদিও গেল নভেম্বরে ভারত সফরে চরম বিপর্যয়েও উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিল তার ব্যাট। পাকিস্তানে না যাওয়ায় মুশফিককে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রাখা হবে কি-না তা নিয়ে বিতর্ক ছিল কদিন আগে। ১০ চারে ফিফটির পর ১৮ চারে তিন অঙ্কে পৌঁছে বিশেষ উদযাপনে মুশফিকের স্বস্তি প্রকাশও ছিল অন্যরকম। পেসারদের বলে স্ট্রেট ড্রাইভ, কাভার ড্রাইভ, স্পিনারদের একের এক সুইপে নাজেহাল করে রাখেন তিনি। ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ৩১৫ বলে, ততক্ষণে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৮ বাউন্ডারি।
মুমিনুলের পর ছয়ে নেমে মিঠুন তড়িঘড়ি ফিরে যাওয়ার পর লিটনের সঙ্গে ফের জুটি গড়ে ওঠে মুশফিকের। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনে যোগ করেন  ১১১ রান। তাতে লিটনও খেলেছেন তার মতো। এদিন শুরু থেকেই বেশি দায়িত্ববান মনে হচ্ছিল তাকে। থিতু হতে সময় নিয়েছেন, পরে কর্তৃত্ব নিয়েই চালিয়েছেন ব্যাট। পঞ্চম ফিফটি তুলে ডানা মেলে ওড়ার সুযোগ ছিল আরও ওপরে। কিন্তু সিকান্দার রাজার নিরীহ এক বলে লেট কাট করতে গিয়ে তার ৫৩ রানের ইনিংস জমা পড়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে।
এরপর আকর্ষণ বলতে ছিল মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি। সেই কীর্তি গড়ার পথে তামিম ইকবালকে ছাড়িয়ে দেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ রানের মালিকও বনে যান মুশফিক। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন ২০৩ রানে। শেষ বিকালে অফ স্পিনার নাঈম প্রথম ওভারেই পর পর দুই বলে ফিরিয়ে দেন ওপেনার প্রিন্স মাসভাউরে আর নাইটওয়াচম্যান ডোনাল্ড টিরিপানোকে। উইকেটে আরেক ওপেনার কেভিন কাসুজা ৮ ও ব্রেন্ডন টেইলর ১ রানে আছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
(তৃতীয় দিন শেষে)
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস: ২৬৫
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৫৪ ওভারে ৫৬০/৬ (ডিক্লে) (তামিম ৪১, সাইফ ৮, শান্ত ৭১, মুমিনুল ১৩২, মুশফিক ২০৩*, মিঠুন ১৭, লিটন ৫৩, তাইজুল ১৪*; টিরিপানো ১/৯৬, নিয়াউচি ১/৮৭, রাজা ১/১১১, টুসুমা ১/৮৫, এনডিলোভু ২/১৭০)
জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস: ৫ ওভারে ৯/২ (মাসভাউরে ০, কাসুজা ৮*, টিরিপানো ০, টেইলর ১*; নাঈম ২/৪, তাইজুল ০/৫)।

Post a Comment

0 Comments