বার্সেলোনাকে হারিয়ে শীর্ষে ফিরল রিয়াল


ঘরের মাঠে শেষ চারটি এল ক্লাসিকোতে হেরেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। সবমিলিয়ে সাতটি এল ক্লাসিকোতে জয় নেই। তার উপর শেষ দুই ম্যাচের বাজে পারফরম্যান্সে শীর্ষস্থান হারায় দলটি। তাই লালিগার রেসে টিকে থাকতে ক্লাসিকোতে জয়ের বিকল্প ছিল না তাদের। তার ষোলোআনায় করেছে তারা। বার্সেলোনাকে হারিয়ে আবারো লিগের শীর্ষে ফিরেছে জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শনিবার রাতে বার্সেলোনাকে ২-০ গোলের ব্যবধানে হারায় রিয়াল। 
রিয়ালের কাছে শীর্ষস্থান হারানোর দিনে নতুন রেকর্ড গড়েছেন বার্সা অধিনায়ক লিওনেল মেসি। বার্সার হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩টি এল ক্লাসিকো ম্যাচ মাঠে নামলেন এ আর্জেন্টাইন। এতো জাভি হার্নান্দেজের সঙ্গে সমান ৪২টি করে এল ক্লাসিকো ম্যাচ খেলে ছিলেন তিনি। তবে এদিন এল ক্লাসিকোতে মাঠে নেমে সর্বোচ্চ এল ক্লাসিকো ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা আরও জোরদার করেন রিয়াল অধিনায়ক সের্জিও রামোস। ৪৪তম ক্লাসিকো ম্যাচ খেলেন রিয়াল অধিনায়ক।
অথচ শেষ দুটি লিগ ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট খুইয়েছিল রিয়াল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও শেষ ষোলোর ম্যাচে ঘরের মাঠে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে হারে তারা। তবে এদিন ভিন্ন রিয়ালই মাঠে নেমেছিল। প্রথমার্ধে সমান তালে লড়াই হলেও দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় একক প্রাধান্য ছিল স্বাগতিকদের। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম সুযোগটি পায় তারা। ছোট কর্নার থেকে ডি-বক্সে বল পেয়েছিলেন করিম বেনজেমা। তবে তার নেওয়া ভলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
নয় মিনিট পর ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের কাটব্যাক থেকে ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন টনি ক্রুস। তবে তার নেওয়া শট লক্ষ্যে থাকেনি। ২১তম মিনিটে অবিশ্বাস্য এক মিস করেন গ্রিজমান। মেসির বাড়ানো বলে দারুণ এক কাটব্যাক করেছিলেন জর্দি অলবা। কিন্তু ফাঁকায় থেকেও গ্রিজমানের নেওয়া শট তুলে দেন আকাশে।
২৯তম মিনিটে বেনজেমার কাটব্যাক থাকে আবারো ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন ক্রুস। কিন্তু এবারও লক্ষ্যে রাখত পারেননি এ জার্মান তারকা। পরের মিনিটে ভিদালের কাছ থেকে বল পেয়ে গ্রিজমানের বাড়ানো বল থেকে মেসির শট সহজেই ধরে ফেলেন রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কর্তুয়া। ম্যাচে এটাই প্রথম অনটার্গেট শট।
৩৪তম মিনিটে দিনের সেরা সুযোগটি মিস করেন আর্থুর মেলো। অবশ্য দারুণ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন রিয়াল গোলরক্ষক কর্তুয়া। নিজেদের অর্ধ থেকে বাড়ানো বলে গোলরক্ষক একা পেয়ে গিয়েছিলেন আর্থুর। কিন্তু তার শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে রিয়ালকে বাঁচিয়ে দেন কর্তুয়া। চার মিনিট পর আরও একটি দারুণ সেভ করেন কর্তুয়া। এবার হতাশ করেন মেসিকে। বুসকেতসের বাড়ানো বল থেকে দারুণ শট নিয়েছিলেন মেসি। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিস্ট করে তা ফিরিয়ে দেন রিয়াল গোলরক্ষক।
৫৬তম মিনিটে অবিশ্বাস্য এক সেভ করেন বার্সেলোনা গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রেস টের স্টেগেন। মার্সেলোর কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সের সামান্য বাইরে থেকে সময় নিয়ে নিখুঁত এক শট করেন ইসকো। কিন্তু অসাধারণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে ফিস্ট করে ঠেকিয়ে দেন সে শট। ম্যাচ তো বটেই এখন পর্যন্ত আসরের সেরা সেভই হয়তো এটাই।
পাঁচ মিনিট পর আবারো অবিশ্বাস্য একটি সেভ করেন টের স্টেগেন। আবারো হতাশ করেন সেই ইসকোকে। কার্বাহালের ক্রস থেকে ফাঁকায় দারুণ শট নিয়েছিলেন এ স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন স্টেগেন। তবে ফেরানোর পর বল গড়িয়ে জালের দিকেই যাচ্ছিল। একেবারে গোললাইন থেকে তা ফিরিয়ে দেন পিকে।
৬৩তম মিনিটে দারুণ সুযোগ মিস করেন বেনজেমা। দানি কার্বাহালের কাছ থেকে ডান প্রান্তে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন এ ফরাসী। কিন্তু তার ভলি লক্ষ্যেই থাকেনি। ৭০তম মিনিটে বদলী নেমেই প্রথম ছোঁয়া গোল দেওয়ার খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন মার্টিন ব্র্যাথওয়েট। সের্জিও রামোসের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়েছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ হারালে নষ্ট হয় সে সুযোগ।
তবে পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল আদায় করে নেয় রিয়াল। টনি ক্রুসের কাছ থেকে বল আদান প্রদান করে জোরালো শট নিয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস। তবে পিকের পায়ে লেগে দিক বদলে বল জালে জড়ালে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ৭৫তম মিনিটে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন মেসি। তবে মার্সেলোর দারুণ ডিফেন্ডিংয়ে কোন বিপদ হয়নি।
৮৩তম মিনিটে মেসির নেওয়া ফ্রিকিক থেকে ফাঁকায় হেড দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন পিকে। কিন্তু তার হেড লক্ষ্যে থাকেনি। উল্টো ম্যাচের শেষ মুহূর্তে বার্সেলোনার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন বদলী খেলোয়াড় মারিয়ানো দিয়েজ। কার্বাহালের বাড়ানো বল নিয়ে দারুণ দক্ষতায় দুই ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে ডি-বক্সে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় টের স্টেগেনকে পরাস্ত করেন এ তরুণ।
এ জয়ে ২৬ ম্যাচে ১৬টি জয় ও ৮টি ড্রয়ে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে এলো রিয়াল। সমান ম্যাচে দুই পয়েন্ট কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে বার্সেলোনা।

Post a Comment

0 Comments